গবেষণায় প্রকাশ: শিকারিরা কেন মহিলাদের টার্গেট করে (পোশাক নয়!)
আমি কুকুরটা নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছি—প্রতিদিনের একটা ছোট নিয়ম। পথটা জানি, গাছগুলো, ফুটপাথের ফাটল, লাশার উপর ভাঙা সেই ছোট লাটিগুলো—সব কিছুই স্বাভাবিক। হঠাৎ—দুইজন পুরুষের একটা অশ্লীল আওয়াজ আমার কান পেয়ে যায়। তাছাড়া তারা ঠামাঠামি করে চিৎকার করে; মজা না, ইচ্ছেকৃত নোংরা মন্তব্যগুলি। একবারে ওই রাগটা উঠল—ভয়ে না, রাগে। এমন রাগ যেটা বলছিল, “আরে বাবা, এটা তো অগ্রহণযোগ্য।”
আমরা সবাই ছোটবেলায় শেখাই কিভাবে ‘টিকে থাকা’ যায়—চোখ নামিয়ে নাও, দ্রুত হাঁটো, চাবির খোঁপা হাতে ধরো যেন জরুরী মুহূর্তে কেউ গোঁসা দিলে চোখে ঘষতে পারো। আমি সেই কৌশলগুলো ১৬ বছর ধরে মনে রেখেছি। ভাবো তো—আমি এখন ৫৪, আর ওটাই আমার অস্ত্র? কী অদ্ভুত ব্যাপার! আমরা মেয়েদেরকে অস্ত্রশিক্ষায় অভ্যস্ত করে দিই, কিন্তু সেই আগুন লাগানোর লোকদের কিভাবে শাসন করা যায় তা করিনি।
এই চাবি-গোঁসা–চিন্তা কতটা অদ্ভুত। রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে কখনো চাবি শক্ত করে ধরেছি আর ভাবেছি—কি হলে কী করব। যারা এভাবে চিন্তা করে, তারা একেকটা ছোট কাহিনীর ভেতর বাঁচে—কখনো ভিন্ন রাস্তা নিতেই হবে, কখনো অচেনা লোকের চোখে চোখ না মেলানোই হবে। আর এটাই নিত্যদিনের গল্প।
লক্ষ্য করো—সবাই বলে যে ধর্ষক বা সন্দেহভাজনরা দেখতে কেমন বা কেউ কী পরছে তা দেখে টার্গেট করে। কিন্তু গবেষণাও বলে—সাধারণত তারা ‘ভাল সুযোগ’ খোঁজে। অর্থাৎ যাকে তারা মনে করে প্রতিবাদ করবে না, মুখ খুলবে না, সোজা সোজা চলেই যাবে—এইসব লোককেই টার্গেট করে। সেটা পোশাক নয়, সেটা দুর্বলতার অনুভব। আর আমরা সেই দুর্বলতাই বড় করে তুলি—কারণ আমরা কাউকে ডাকতে শিখাই না, কাউকে দমন করতে শিখাই না, আমরা শুধু বলি, “সাবধান করো, নিজেকে রক্ষা করো।”
আমি মনে করি—এই রাগটা ব্যক্তিগত নয়, এটা সামাজিক। প্রত্যেকবার কেউ বলে—“ভাল করে উপায় করে নিও”, বা “সে কিচ্ছু না”, তখন সমাজটা শেখে—তুমি এভাবে করো, ফলে সে কিছুও পাবে না। ফলে অপরাধীর জন্য সামাজিক দন্ডটা কম। আর এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। অপরাধী কোনো আঘাত হলে বেশি শাস্তি ভোগ করবে না, কিন্তু ভিকটিমকে বারবার নিজেকে প্রমাণ করে চলতে হয় যে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—এটা অশোভনতা।
আমি যখন সেই রাস্তায় হাঁটছিলাম, আমার ভেতরটা রেগে গেল—কেন আমি সব সময় অনুকূল বদলে নিচ্ছি? কেন আমি প্রতিদিন নিজেকে সঙ্কুচিত করে রাখি? আমাদের সমাজটা কবে এমন হবে যে মองগুলি শিক্ষা পাবে—সীমানা মানতে হয়, কাউকে অপমান করে চলার অধিকার নেই? যখন আমরা প্রশ্নটা উল্টে বলি—“কেন কেউ কাউকে টার্গেট করে?”—তখন সমাধানগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করে।
সমাধানগুলো সহজ নয়, কিন্তু অসম্ভবও না। স্কুল-শিক্ষার ভেতর সম্মান, সম্মতি (consent) আর অর্থবোধ শেখানো জরুরি। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শেখাতে হবে অন্যের শরীর, অন্যের জায়গা—এগুলো নিয়ে গোলমাল করা যায় না। বড় পরিসরে দরকার সামাজিক প্রচারণা—যেটা হ্যাঁ বলে না, হ্যাঁ বলার ক্ষেত্রে কঠোর হবে। বাইস্ট্যান্ডারদের দায়িত্ব বাড়াতে হবে—যে কেউ যদি অসদাচরণ দেখে চুপ রাখে না, সামান্য একটা কথা বললেই অনেক কিছু বদলে যায়। আবার ইন্সটিটিউশনগুলোকেও আগে থেকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে—কোনও অভিযোগ এলে কিভাবে গ্রহণ করতে হবে, কিভাবে তদন্ত হবে, ভিকটিমকে কিভাবে বেঁচে থাকা সেবা দেওয়া হবে—এসব ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আর একটি বড় কথা—অ্যাকাউন্টেবিলিটি। আমরা যাকে জিজ্ঞাসা করি সে তো অপরাধ করেছে—তার সামাজিক ও আইনি দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে। এখনকার মতো ‘একটু লজ্জা’ বা ‘একটু হাসি’ দিয়ে ছেঁকে ফেলা নয়। যদি সাবধান সতর্কতা বাড়ে, অপরাধীর খরচ বেড়ে যাবে—তাহলে তারা কারচুপি কম করবে। আমাদের নাগরিকরা, শিক্ষকরা, পিতামাতা সবাইকে যোগ দেতেই হবে—শিশুদেরই শেখাতে হবে কিভাবে সম্মান করা হয়, কিভাবে শব্দগুলোকে ব্যবহার করা যায়।
রাগকে কাজে লাগাতে পারলে সেটা ক্ষোভ নয়—সেটা শক্তি। আমি যে হাঁটতে গিয়েছিলাম, আর দুজন কুৎসিত মন্তব্য শুনে ফেরত এলাম—আমি আর সেদিনের মতো ভিন্ন নই। কিন্তু হাঁটা ছিল ভিন্ন: এখন আর ভয় কিংবা শাস্তি-প্যাটার্ন নয়, এটা ছিল উদ্দেশ্যবোধ। আমি আর চাই না ১৬ বয়সে চাবি ধরার কৌশল শিখিয়ে দেওয়া হোক। আমি চাই যে, কোনোকেও ওই কৌশলটা শিখতে না হয়। আমি চাই মেয়েরা পার্কে, রাস্তা বিলে, বাজারে নির্দ্বিধায় হাঁটতে পারে।
আমরা সব সময়ই নিরাপত্তার কথা ভাবব—কারণ জগৎটা পুরোপুরি নিখাদ নয়। কিন্তু আমরা কখনোই বাঁচতে চায় এমন রোগাক্রান্ত কৌশল যেমন “চাবি দিয়ে চোখে আঘাত কর”—এগুলো শেখাতে চাই না। তা শেখানো মানেই সমাজকে মেনে নেয়া—“এটাই নারীর ভাগ্য” বলার মতো। না। এইটা মানা যাবে না। বদল আনতে হবে—নীতিতে, শিক্ষা ব্যবস্থায়, সামাজিক কৌশলে।
শেষে বলি—রাগটা রেখে দেব না। সেটা বাড়বে না, তীব্র হবে। কিন্তু সেটাকে কাজে লাগাতে হবে—শিক্ষা, আইন, সামাজিক সচেতনতা—এসব দিয়ে কাজ করতে হবে। আর আমি হাঁটছি—আরও ধীরে, আরও জোরে, আর নিজের জায়গাটা ফেরত নিয়ে নিচ্ছি। আর যদি তুমি বলো, “চলো, এটা নিয়ে আমরা কিছু করি”—তবে চল, একসাথে করব। পরিবর্তন আসবে একসাথে করে।
attackers choose victims psychology
do predators target women based on clothing
self defense tips for women
women’s safety keys between fingers
catcalling and harassment
women walking alone safety
why men harass women
how predators choose victims
stop blaming women for harassment
#WomensSafety
#StopHarassment
#PredatorsExposed
#EndCatcalling
#WalkFree
#WomenEmpowerment
#SafetyForAll
#NotWhatIWear
#ConsentCulture
#EveryWomanKnows
Comments
Post a Comment